ভলিবল খেলার নিয়মাবলী এবং কিভাবে খেলতে হয়

ভলিবল একটি দলগত ইনডোর ও আউটডোর খেলা, যা শক্তি, কৌশল এবং দলীয় সমন্বয়ের উপর ভিত্তি করে খেলা হয়। নিচে ভলিবল খেলার নিয়মাবলী এবং খেলার পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

ভলিবল খেলার সরঞ্জাম:

উপাদানবিবরণ
বলবিশেষভাবে তৈরি হালকা ওজনের বল
কোর্টদৈর্ঘ্য ১৮ মিটার, প্রস্থ ৯ মিটার
নেটপুরুষদের জন্য নেটের উচ্চতা ২.৪৩ মিটার, মহিলাদের জন্য ২.২৪ মিটার
জার্সিপ্রতিটি দল নির্দিষ্ট রঙের পোশাক পরে

খেলোয়াড়দের অবস্থান:

প্রতিটি দলে ৬ জন খেলোয়াড় থাকে, এবং তারা ২টি সারিতে অবস্থান করে:

  • ফ্রন্ট রো (সামনের সারি): ৩ জন (অফেন্সিভ প্লেয়ার)
  • ব্যাক রো (পেছনের সারি): ৩ জন (ডিফেন্সিভ প্লেয়ার)

খেলা শুরু হয় সার্ভ দিয়ে এবং খেলোয়াড়রা ঘড়ির কাঁটার দিকে রোটেট করে অবস্থান পরিবর্তন করে।

ভলিবল খেলার নিয়মাবলী:

০১. সার্ভ (Serve):

  • একটি দল সার্ভ দিয়ে খেলা শুরু করে।
  • সার্ভটি অবশ্যই জাল পেরিয়ে প্রতিপক্ষের কোর্টে পড়তে হবে।

০২. বল খেলা (Rally):

  • বল একবারে সর্বোচ্চ ৩ বার স্পর্শ করা যায় (তবে একজন খেলোয়াড় একসাথে দুইবার স্পর্শ করতে পারে না)।
  • ৩টি স্পর্শের মধ্যে বলটি প্রতিপক্ষের কোর্টে পাঠাতে হয়।

০৩. পয়েন্ট পাওয়ার নিয়ম:

  • বল যদি প্রতিপক্ষের কোর্টে পড়ে যায় বা তারা ভুল করে, তাহলে আপনার দল পয়েন্ট পায়।
  • যদি একটি দল সার্ভ করে এবং পয়েন্ট পায়, তারা আবার সার্ভ করবে।

০৪. সেট (Set) ও ম্যাচ:

  • একটি ম্যাচে সাধারণত ৫টি সেট থাকে।
  • প্রথম চারটি সেট খেলা হয় ২৫ পয়েন্টে এবং পঞ্চম সেট হয় ১৫ পয়েন্টে।
  • যে দল প্রথমে ৩টি সেট জেতে, সেই দল ম্যাচ জেতে।
  • প্রতিটি সেটে কমপক্ষে ২ পয়েন্ট ব্যবধানে জিততে হয় (যেমন: 25–23)।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা:

  • বল হাতে ধরা যাবে না (catch/foul)
  • জালের উপর স্পর্শ করলে ফাউল গণ্য হয়।
  • সার্ভ করার সময় লাইনের উপর পা রাখলে ফাউল হয়।
  • ব্যাক রো প্লেয়াররা সামনে এসে স্পাইক করতে পারে না (কিছু নিয়মে সীমাবদ্ধতা থাকে)।

খেলোয়াড় পরিবর্তন:

  • প্রতিটি দলে নির্দিষ্ট সংখ্যক বার খেলোয়াড় পরিবর্তনের সুযোগ থাকে (সাধারণত প্রতি সেটে ৬টি পরিবর্তন)।
  • “লিবেরো” নামে একজন বিশেষ ডিফেন্সিভ খেলোয়াড় থাকে, যে জার্সির রঙে আলাদা থাকে এবং শুধুমাত্র ব্যাক রো-তে খেলে।

কৌশল:

  • পাস (Pass): সাধারণত প্রথম বল রিসিভ করার কৌশল (বাম্প বা ফোরআর্ম পাস)
  • সেট (Set): দ্বিতীয় স্পর্শে বল ওপরে তুলে দেওয়া হয় যাতে তৃতীয় খেলোয়াড় স্পাইক করতে পারে।
  • স্পাইক (Spike): বল শক্তি দিয়ে নিচে প্রতিপক্ষের কোর্টে মারার কৌশল।
  • ব্লক (Block): প্রতিপক্ষের স্পাইক প্রতিরোধ করার জন্য জালের সামনে লাফ দিয়ে বল ঠেকানো।

কিভাবে খেলতে শিখবেন?

  • ভলিবল খেলা পর্যবেক্ষণ করুন – ইউটিউব বা টিভিতে ভালো ম্যাচ দেখুন।
  • প্র্যাকটিস করুন – পাস, সেট, সার্ভ এবং স্পাইক শেখার জন্য নিয়মিত প্র্যাকটিস করুন।
  • টিম গঠন করুন – দলের সাথে সমন্বয় শেখার জন্য দলীয় প্র্যাকটিস করুন।
  • কোচিং নিন – প্রফেশনাল কোচের অধীনে ট্রেনিং নিলে দ্রুত শেখা যায়।
  • ফিটনেস বজায় রাখুন – দৌড়, জাম্পিং, স্ট্যামিনা ও রিফ্লেক্স উন্নত করতে হবে।

উপসংহার:

ভলিবল একটি চমৎকার শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জিং খেলা। নিয়ম মেনে খেলা ও দলীয় সমন্বয় উন্নত করে খেলাটি উপভোগ্য এবং কার্যকরী হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top